কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ১৭ দিন পর দগ্ধ এক শিশুর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। নিহত সাব্বির হোসেন (১২) উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের সালাউদ্দিন আহমেদের ছেলে।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাব্বিরের চিকিৎসাধীন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিশুটির বাবা সালাউদ্দিন আহমেদ। সাব্বির স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে সাব্বিরের শরীরের ৪৬ শতাংশ পুড়ে যায়। গত ২৪ জানুয়ারি থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
গত ১৩ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলার মোকরা ইউনিয়নের বিরুলী গ্রামে ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪১ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের বেশিরভাগই শিশু। ঘটনার পর চিকিৎসকরা বলছেন, ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে পর সিলিন্ডারটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। আহতদের অনেকের শরীরে এক হাজারের বেশি স্প্লিন্টার প্রবেশ করেছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে বিরুলী গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হালিমের ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ আল নাহিম একটি চোখ হারিয়েছে। বিস্ফোরণের সময় নাহিমের ডান চোখে দুটি পাথরের টুকরো ঢুকে পড়ে। এতে নাহিমের ডান চোখটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে অস্ত্রোপচার করে নাহিমের অকেজো চোখটি তুলে ফেলা হয়।

নিহত সাব্বিরের বাবা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘটনার দিন সাব্বির সেখানে বেলুনে গ্যাস ভরা দেখতে গিয়েছিল। এরই মধ্যে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছেলেটার জীবনই চলে গেলো। গত ১৭ দিন ছেলেটা যেন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের মোঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবছর মাঘ মাসের ১ তারিখে একদিনের জন্য ‘ঠাণ্ডাকালী’ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো বৃহৎ মেলাটিতে প্রতি বছর পাশের মোকরা ইউনিয়নের বিরুলী গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন গ্যাস বেলুনের ব্যবসা করেন। তার কাছ থেকে পাইকারি  ও বেলুন নিয়ে মেলায় বিক্রি করেন। পাইকারি ক্রেতাদের জোগান দিতে গত ১৩ তারিখ বিকেলে আনোয়ারের বাড়িতে সিলিন্ডার থেকে বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস ভরছিলেন। হঠাৎই সিলিন্ডারটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়ে যায়। এ ঘটনায় আহতদের অন্তত ১০ জনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

কলমকথা/রোজ